নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়াগেছে। বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার দক্ষিণ কাজির চর গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী ও ওই এলাকার মৃতঃ আবদুল খালে হাওলাদারের ছেলে বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, মুলাদী উপজেলার দক্ষিণ কাজির চর গ্রামের দেলোয়ার ফকিরের ছেলে মোঃ শহিদুল ফকির, কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা মোঃ দুলাল, মৃত হানিফ বেপারির ছেলে মোঃ বাচ্চু, মৃতঃ জব্বার জোমাদ্দারের ছেলে বশির জোমাদ্দার।
মামলার বিবরন সুত্রে জানাগেছে, উক্ত মামলার আসামীরা বিদেশে অবৈধভাবে আদম পাচারকারি দলের সক্রিয় সদস্য। এরা গ্রামের সাধারন মানুষকে ধোকা নিয়ে বিদেশে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা হাতে পেয়ে গেলে প্রত্যারক চক্র গা ঢাকা দিচ্ছে।
মোঃ শহিদুল ফকির, তিন নং আসামী মোঃ বাচ্চুর ভগ্নিপতি কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা মোঃ দুলাল, ও বাচ্চু নিজে এসে মামলার বাদী মোঃ নুর ইসলাম হাওলাদার এর ছেলে মোঃ পারভেজকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ভূয়া কাগজপত্র নিয়ে এসে দেখায়। তাদের কথা ও কাগজপত্র দেখে বিশ্বাস করে মোঃ নুর ইসলাম হাওলাদার তার ছেলে মোঃ পারভেজকে বিদেশে পাঠানোর সিধান্ত নেয়। এসময় প্রত্যারক চক্র মোঃ পারভেজকে সৌদি আরবে চাকুরীর ভিসা ও জয়েন্ট করানোর জন্য ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে আমি বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ২লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ও ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) থেকে ১ লক্ষ টাকা গ্রহন করি। সব মিলিয়ে আমি, ৩ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা রিন গ্রহন করি। ওইদিনউ দুপুর ২টার দিকে আমি ৩লক্ষ ৯০ জাজার টাকা আসামীদের উপস্থিতিতে প্রদান করি।
টাকা গ্রহনের পর আসামীরা মোঃ পারভেজের সকল কাগজপত্র নিয়ে যায়। তাদের কথা মত একমাস মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আসামীদে;র সাথে যোগাযোগ করলে তারা নানা ভাবে প্রত্যারনা করে ও তালবাহানা শুরু করে।
গত চলতি বছরের ৫ ফেব্রেুয়ারি মামলার ১নং আসামী মোঃ শহিদুল ফকির এর বাসায় শালিশ মিমাংশার জন্য বসলে মোঃ শহিদুল ফকির আমার ছেলেকে সৌদি পাঠানো ও নগদ ৩লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নেয়ার কথা অস্বিকার করে। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা আসামীদের সন্ত্রাসী বাহীনি নানা ভাবে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
এঘটনায় মোঃ নুর ইসলাম হাওলাদার বাদী হয়ে চলতি বছরের ১৮ আগস্ট চার জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ে করেন। মামলার পেক্ষিতে আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য মুলাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন মোঃ তরিকুল হাসান খান মিঠু কে দায়িত্ব দেন।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান দুই পক্ষকে নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ প্রদানের পেক্ষিতে দুই পক্ষ গত ৯ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সেখানেও আসামীরা চেয়ারম্যানের নিকট টাকা নেওয়ার কথা অস্বিকার করে। পরে তদন্তের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে বিবাদী স্বাক্ষিগনের সামনে ৩লক্ষ ১০ হাজার টাকা নেয়। বাকী ৮০ হাজার টাকার কথা অস্বিকার করে। যা প্রাথমিক ভাবে সত্যতা প্রমানিত হয়েছে।
এদিকে মুলদীতে প্রত্যারনার কবলে শুধু মোঃ পারভেজই নয় ওই এলাকার আরো অনেক পরিবার সর্বশান্ত হয়েছে। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে সাধারন মান ষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিদেশে চাকুরী, মোটা অংকোর বেতন এর প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যারক চক্রটি মানুষকে হয়রানি করছে।
জানাগেছে ওই এলাকার নুরু মাওলানার ছেলে সালাউদ্দিনকে ভিয়েতনাম পাঠানোর কথা বলে ৬লক্ষ টাকা। সাজাহান খান এর লেখে হালিম খান কে ভিয়েতনাম পাঠানোর কথা বলে ৪লক্ষ টাকা, রাসেদ এর কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা, আবু বক্কর সিদিকের কাছ খেকে সাড়ে ৩লক্ষ টাকা, মনির সিকদারের স্ত্রী মিতু বেগমকে সৌদি পাঠানোর কথা বলে ১লক্ষ টাকা । সম্প্রতি মিতু বেগম মৃত্যু রবন করলেও তিনি এখনও ওই এক লক্ষ টাকা ফের পায়নি। মোনছেবের স্ত্রী চম্পা বেগমকে সৌদি পাঠনোর কথা বলে ১লক্ষ টাকা নেয়া হলেও দের মধ্যে কাউকেই বেদিশে পাঠানা হয়নি। এমনকি তাদের থেকেনেয়া টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে মামলার দুই নং আসামী গ্রামীম ওভারসীস (লাইসেন্স নং ৮৩৪) ঢাকা নয়াপল্টন এলাকার মালিক দুলাল জানান, তিনি টাকা নেওয়া কথা স্বিকার করে বলে নুর ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মোঃ পারভেজকে সৌদি পাঠানোর জন্য ৪লক্ষ ১০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। যা ১ মাসের মধ্যে পরিষোধ করতে হবে। নুর ইসলাম টাকা দিতে বিলম্ব করে পর্যায়ক্রমে ৩লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেয়। ১ লক্ষ টাকা বাকী থাকার কারনে তিন মাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। যার ফলে বকেয়া টাকার জন্য পারভেজকে পাঠানো সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয় শালিশ বৈঠকে পারভেজের পরিবারকে ২লক্ষ টাকা পরিশোধের কথাও তিনি স্বিকার করেন। তবে করোনা পরিস্থিততির কারনে সেটা সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply